গান্ধি পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকের করণীয়

ধানের বৃদ্ধি পর্যায়ের উপর ভিত্তি করে গান্ধী পোকা খাওয়ার ফলে শস্যদানা গুলো খালি বা ক্ষুদ্র, কুঁচকানো, বিকৃত হতে পারে এবং কখনও কখনও আক্রান্ত দানা বিশ্রি গন্ধযুক্ত হয়। ধানের শীষকে খাড়া দেখতে লাগে। ধানের গান্ধী পোকা সময়মত দমন করা না গেলে, মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে ফসলের জন্য এবং অনেক সময় ৩০% পর্যন্ত ফলন কমিয়ে দেয়।

ধানের গান্ধি পোকার ক্ষতির লক্ষণঃ

  • বাচ্চা (নিম্ফ) ও পূর্ণবয়স্ক উভয়ই ধানের দুধ অবস্থায় বাড়ন্ত দানা থেকে রস চুষে নেয় ফলে ধানে চিটা হয়।
  • শক্ত দানা অবস্থায় আক্রমণ করার ফলে আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায় এবং চাউলের মান খারাপ হয়, মাড়াইয়ের সময় চাল ভেঙ্গে যায়।
  • পূর্ন বয়স্ক গান্ধী পোকা ধানের পাতা ও শীষের উপর সারি করে ডিম পাড়ে।
  • সবুজ রংয়ের বাচ্চা এবং পূর্ন বয়স্ক গান্ধী পোকার গা থেকে বিশ্রি দুর্গন্ধ বের হয়।

ধানের গান্ধি পোকার আক্রমণের পর্যায়ঃ শীষ অবস্থা।

ধানের গান্ধি পোকা ফসলের যে অংশে আক্রমণ করেঃ ফল।

ধানের গান্ধি পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করেঃ নিম্ফ, পূর্ণ বয়স্ক।

ধানের গান্ধি পোকার এটা আক্রমণ কি কারণে হয়েছেঃ
গান্ধী পোকা ধানের সকল প্রকার প্রকৃতিতেই দেখা যায়। জমির কাছাকাছি বনাঞ্চল বা আগাছা পরিপূর্ণ মাঠ, বন্য ঘাস সমৃদ্ধ সেচখাল সংলগ্ন এলাকায় বুনো ঘাস থাকলে ও জমি ব্যাপক ঘাসে ভরা থাকলে পোকার উপদ্রব দারুনভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মরশুমে বৃষ্টি শুরু হলে এ পোকা সক্রিয় হয়ে ওঠে। উষ্ণ আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ এবং ঘন ঘন গুঁড়ি বৃষ্টি পোকার বংশবৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়। খরা মরশুমে এরা কম সক্রিয় থাকে। ধানের শীষের ব্যাকটেরিয়া জনিত ঝলসানো রোগের সঙ্গে লক্ষণগুলি একইরকম দেখতে লাগে।

ধানের গান্ধি পোকার দমন ব্যবস্থাপনাঃ


ধানের গান্ধি পোকার জৈবিক দমনঃ

  • ২০০-৩০০ মিটার দূরে দূরে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করা।
  • শামুকের মাংসের সংঙ্গে বালাইনাশক মিশিয়ে কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে ধানের দুধ আসার সময় বিষ ফাঁদ হিসেবে ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা।
  • হাত জালের সাহায্যে গান্ধী পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলা।
  • কেরোসিন ভিজানো দড়ি আক্রান্ত ক্ষেতে আড়াআড়িভাবে টেনে পোকা দমন করা।


ধানের গান্ধি পোকার রাসায়নিক দমনঃ

  • প্রতি গোছায় ২-৩ টি গান্ধী পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা
  • আক্রমণ বেশি হলে যে কোন একটি বালাইনাশক ব্যবহার করা। যেমন- ম্যালাথিয়ন, ডায়মেথয়েট, ক্লোরপাইরিফস, সাইপারমেথ্রিন, ক্লোরপাইরিফস+সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের বালাইনাশক অনুমোদিত হারে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

সাবধানতাঃ

  • বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একই গ্রুপের বালাইনাশক একই পোকা দমনের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতি মৌসমে ব্যবহার না করে বিভিন্ন গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
  • আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
  • ঝড়ের পরপরই জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করবেন না।
  • ফসল সংগ্রহের পর জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।

+ There are no comments

Add yours