চুঙ্গী পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকের করণীয়

চুঙ্গী পোকার আক্রমণের ফলে ধান পরিপক্ক হতে ৭-১০ দিন বিলম্ব হয়। চুঙ্গী পোকা প্রায় ৩৫ দিনে এক বার জীবনচক্র সম্পূর্ন করে।

চুঙ্গী পোকার ক্ষতির লক্ষণঃ

  • কীড়াগুলো রাতের বেলায় পাতার সবুজ ক্লোরোফিল অংশ লম্বালম্বি এমনভাবে কুড়েকুড়ে খায় যে শুধুমাত্র উপরের পর্দাটি বাকী থাকে। এরা পাতার উপরের অংশ কেটে আড়াই থেকে তিন সেন্টিমিটার লম্বা চুঙ্গী তৈরী করে এবং দিনের বেলায় এ সমস্ত চুঙ্গীর মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
  • পাতা কুড়ে কুড়ে খাওয়ার জন্য এবং পাতা কেটে চুঙ্গী বানাবার ফলে আক্রান্ত গাছের পাতায় লম্বা সাদা দাগ ও পাতার আগা কাটা দেখতে পাওয়া যায়।
  • চুঙ্গীগুলো আক্রান্ত গাছের গায়ে ঝুলতে থাকে এবং ক্ষেতের পানিতে ভাসতে থাকে।
  • আক্রান্ত ক্ষেতে গাছের পাতা সাদা দেখায় এবং পাতার উপরের অংশ কেটে ফসলের ক্ষতি করে।
  • চুঙ্গি পোকার কীড়া পাতার সবুজ অংশ এমন ভাবে খায় যে শুধু পাতার উপরের পর্দাটা বাকী থাকে।

চুঙ্গী পোকার আক্রমণের পর্যায়ঃ চারা, কুশি।

চুঙ্গী পোকা ফসলের যে অংশে আক্রমণ করেঃ পাতা।

চুঙ্গী পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করেঃ কীড়া।

চুঙ্গী পোকার আক্রমণ কি কারণে হয়েছেঃ
ধানের জমিতে জল জমে থাকলে সাধারণত এ পোকার আক্রমণ বেশী দেখা দেয়, বিশেষত নিচু অঞ্চল ও সেচ আওতাভুক্ত জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, এ পোকা আগাছা এবং আগের মরশুমের ধান থেকে গজিয়ে উঠা ও অন্যান্য আগাছা থেকে নতুন রোপিত ধান গাছে আশ্রয় নেয়। কম বয়সী চারা রোপণ করলে তা এ পোকার আক্রমণের সহজ শিকার হয়। চাষাবাদের অনুন্নত পদ্ধতি এবং জমিতে জিঙ্কের অভাব এ পোকার আক্রমণের পূর্বশর্ত। যাইহোক, মোটের উপর ধানের জমিতে স্বল্প সংখ্যায় গাছ থাকলে, সাধারণত এ পোকা দেখা যায়।

চুঙ্গী পোকার দমন ব্যবস্থাপনাঃ


চুঙ্গী পোকার জৈবিক দমনঃ

  • জমির পানি শুকিয়ে ফেলা কারণ চুঙ্গী পোকার ক্রীড়া পানি ছাড়া বাঁচতে পারেনা।
  • আলোর ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
  • কেরোসিন মিশ্রিত রশি টান দিয়ে চুঙ্গী মাটিতে ফেলে দেওয়া।
  • ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে দেওয়া।
  • শামুক, মাকড়সা ও বোলতা সংরক্ষণ করা।


চুঙ্গী পোকার রাসায়নিক দমনঃ

  • শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা। অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন- ক্লোরপাইরিফস, কার্বারিল, ম্যালাথিয়ন গ্রুপের বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করুন।

সাবধানতাঃ

  • বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একই গ্রুপের বালাইনাশক একই পোকা দমনের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতি মৌসমে ব্যবহার না করে বিভিন্ন গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
  • জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • ফসল কাটার পর জমির নাড়া পুড়িয়ে ফেলা।

+ There are no comments

Add yours