বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকের করণীয়

বাদামী গাছ ফড়িং ধানের একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। বাদামী গাছ ফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। একজোড়া পোকা প্রতিবার প্রায় লক্ষাধিক পোকার জন্ম দিয়ে থাকে। এসব পোকা এক একরের বেশি জমির ফসল নষ্ট করে দিতে সক্ষম। অধিকাংশ কৃষকের কাছে বাদামী গাছ ফড়িং ‘‘কারেন্ট পোকা’’ বা ‘‘গুণগুণী’’ পোকা নামে পরিচিত। সাধারণত বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি অনুকূল পরিবেশ পেলে এ পোকার আক্রমণে ক্ষেতে হপার বার্ণ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে ১০০ ভাগ ফলনই ধ্বংস হয়ে যায়।

বাদামী গাছ ফড়িং এর ক্ষতির লক্ষণঃ

  • বাদামী গাছ ফড়িং এর বাচ্চা (নিম্ফ) ও পূর্ণাঙ্গ পোকা উভয়ই ধান গাছের গোড়ার দিকে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে ও সেখান থেকে অনবরত গাছের রস শুষে খেতে থাকে। এ পোকা ধান গাছের কুশি স্তর হতে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ করে।
  • এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, এর ফলে গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে মারা যায়, ফলে দুর থেকে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। এ ধরণের ক্ষতিকে ‘হপার বার্ণ’ বা ‘বাজপোড়া’ বলা হয়।
  • ডিম ফুটে সাদা রঙের অতিক্ষুদ্র বাচ্চা বের হয়ে পাতার খোল থেকে রস খেয়ে বড় হতে থাকে।
  • একদিনে তাদের শরীরের ওজনের ১০-২০ গুণ খেতে পারে। অতিরিক্ত খাদ্য গাছের নিচের পাতায় মধু আকারে ঢেলে দেয়। পরে ঐ মধুতে ঝুল ছত্রাক জন্মে। এই ছত্রাক গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
  • বাদামী গাছ ফড়িং গ্রাসি স্টান্ট, ব্যাগেট স্টান্ট ও উইল্টেড স্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণের পর্যায়ঃ কুশি, ফল পরিপক্ব।

বাদামী গাছ ফড়িং ফসলের যে অংশে আক্রমণ করেঃ কান্ডের গোঁড়ায়।

বাদামী গাছ ফড়িং এর যেসব স্তর ক্ষতি করেঃ নিম্ফ, পূর্ণ বয়স্ক।

বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ কি কারণে হয়েছেঃ
বাদামী গাছফড়িং নিলাপারভাটা লুগেনস দ্বারা এ আক্রমণ হয়। বৃষ্টিস্নাত বা সেচ সুবিধাযুক্ত চাষাবাদ উভয়ক্ষেত্রেই স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ বজায় থাকে এমন জমিতে, অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত জমি, আর্দ্র পরিবেশে ও দীর্ঘ সময় ধরে জমিতে জল আটকে থাকলে এ পোকার আক্রমণ বেশী হয়। ঘন করে চারা রোপন করলে অথবা বপনকৃত জমিতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যাবহার করলে অথবা মরশুমের প্রথম দিকে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে (উপকারী পোকা মারা যায়) বাদামী গাছফড়িং-এর আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে আক্রমণ কম হয় এবং বর্ষা শেষে শুকনো পরিবেশে বাদামী গাছফড়িং এর আক্রমণ বেড়ে যায়।

বাদামী গাছ ফড়িং এর দমন ব্যবস্থাপনাঃ


বাদামী গাছ ফড়িং এর জৈবিক দমনঃ

  • জমির আইল পরিস্কার রাখা, সঠিক দুরত্বে (সারি থেকে সারি ২০-২৫ সেমি ও গুছি থেকে গুছি ১৫-২০ সেমি ) লাইনে চারা রোপন করতে হবে। ১০ লাইন পরপর ১ লাইন ফাঁকা রাখতে হবে।
  • পোকা আক্রান্ত জমির পানি সরিয়ে দিয়ে ৭-৮ দিন জমি শুকনা রাখতে হবে।
  • ইউরিয়া সার ধাপে ধাপে ব্যবহার করতে হবে।
  • নাড়া পুড়ে ফেলা ও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে ২-৩ হাত দূরে দূরে বিলিকেটে সুর্যের আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • জমিতে হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা ছেড়ে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


বাদামী গাছ ফড়িং এর রাসায়নিক দমনঃ

  • অধিকাংশ কুশিতে ৪টি গর্ভবতী স্ত্রী পোকা এবং ৮-১০ টি নিম্ফ পরিলহ্মিত হলে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন- আইসোপোকার্ব, ইমিডাক্লোপ্রিড, থায়ামেথোক্সাম, পাইমেট্রিজিন ইত্যাদি উল্লিখিত যে কোন একটি রাসায়নিক ব্যবস্থায় গাছের গোড়ার দিকে ভালো ভাবে ভিজয়ে অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।

সাবধানতাঃ

  • বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একই গ্রুপের বালাইনাশক একই পোকা দমনের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতি মৌসমে ব্যবহার না করে বিভিন্ন গ্রুপের বালাইনাশক ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
  • সঠিক বয়সে চারা রোপণ করা।
  • ফসল কাটার পর জমির নাড়া পুড়িয়ে ফেলা।

+ There are no comments

Add yours